Pages

Ads 468x60px

Wednesday, December 14, 2011

 দুর্লভ লালমাথা টিয়া

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে জিগাগাছে স্ত্রী লালমাথা টিয়া
ছবি: লেখক
‘লালমাথা টিয়া’ (Plum-headed Parakeet)। বর্তমানে ঢাকা ও খুলনা বিভাগের কোনো কোনো এলাকায় গ্রামীণ পরিবেশে কদাচ দেখা যায়। এদের বৈজ্ঞানিক নাম Psittacula cyanocephala.
লালমাথা টিয়া আমাদের সাধারণ ‘গোলাপিকণ্ঠী’ টিয়ার চেয়ে আকারে ছোট। লম্বায় ৩৩ সেন্টিমিটার, যার মধ্যে লেজই ২২ সেন্টিমিটার। ওজন ৬৫ গ্রাম। দেহের রং হলদে-সবুজ বা হালকা সবুজ। এদের লেজ চিকন এবং ঠোঁট হুকের মতো বাঁকানো। চিবুক কালচে। লেজ নীলচে-সবুজ; লেজের আগা সাদা। পুরুষ টিয়ার মাথার রং প্লাম ফলের মতো বেগুনি লাল। এদের ঘাড় ও গলাজুড়ে থাকে কালো রঙের একটি কলার। কাঁধে আছে মেরুন-লাল দাগ। স্ত্রী টিয়ার মাথার রং হালকা ও ধূসর, যা হলুদ রঙের কলার দিয়ে ঘেরা থাকে। এদের কাঁধের ওপরের দাগটিও হলুদ। স্ত্রী-পুরুষনির্বিশেষে পা ও পায়ের নালা সবুজে-ধূসর। বাচ্চাদের পুরো দেহ সবুজে মোড়ানো। মাথা সবুজ, গাল ও কপাল হলদে। মাথার রং ও লেজের আগার সাদা দাগের মাধ্যমে এদের ফুলমাথা টিয়া (Eastern Blossom-headed Parakeet) থেকে পৃথক করে চেনা যায়।
লালমাথা টিয়া বনের প্রান্ত যেখানে কৃষিজমির সঙ্গে মিলেছে সেখানে, ফলের বাগানে ও খোলা বনে থাকতে পছন্দ করে। এরা সচরাচর ছোট দলে থাকে। বশেমুরকৃবিতে আমি একসঙ্গে পাঁচটি লালমাথা টিয়া দেখেছি। এরা পাকা ফল, ফুল ও ফসল দেখলে খেতে নেমে আসে। এরা শস্য, ফল, কুঁড়ি, ফুলের পাপড়ি ও নির্যাস খেতে পছন্দ করে। বশেমুরকৃবিতে এদেরকে জিগাগাছের ছোট ছোট সবুজ ফল ও কদম ফুল খেতে দেখেছি। এরা টুই-টুই-টুই-টুই-টুই-টুই স্বরে ডাকে। উড়ন্ত অবস্থায় বেশি ডাকে।
জানুয়ারি থেকে এপ্রিল এদের প্রজননকাল। এরা যেকোনো গাছের জুতসই কোনো খোঁড়লে বাসা বাঁধে। কাঠঠোকরা, বসন্তবৌরি বা অন্যান্য খোঁড়লবাসী পাখির বাসা দখল করে নিজেদের মতো করে সাজিয়ে নেয়। অনেক সময় কাঠের ছিলকা দিয়ে বাসার লাইনিং তৈরি করে। স্ত্রী লালমাথা টিয়া চার থেকে ছয়টি সাদা ডিম পাড়ে। prothom-alo
Reade more >>

Friday, December 9, 2011

বাইক্কা বিলে বিরল পাখি

বাইক্কা বিল থেকে পাওয়া ‘বড়ঠোঁট চুটকি’ বাইক্কা বিল থেকে পাওয়া ‘বড়ঠোঁট চুটকি’
ছবি: প্রথম আলো
বাইক্কা বিলে বিরল প্রজাতির এক পরিযায়ী পাখির দেখা পাওয়া গেছে। পাখি পর্যবেক্ষকেরা বলেছেন, পাখিটির নাম ‘বড়ঠোঁট চুটকি’। এটি বিশ্বব্যাপী অতিসংকটাপন্ন প্রজাতির একটি পাখি। গত ১০ বছরে থাইল্যান্ডে মাত্র দুটি পাখি দেখা গেছে। তৃতীয়বার দেখা গেল মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার হাইল হাওরের ‘বাইক্কা বিল অভয়াশ্রমে’ গবেষণার জন্য বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের গবেষক দলের পাতা ফাঁদে ৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় এ পাখি ধরা পড়ে।
বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের সভাপতি ইনাম আল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই পাখি সম্পর্কে খুব একটা তথ্য কারও জানা নেই। গত ১০ বছরে থাইল্যান্ডে দুবার এ প্রজাতির দুটি পাখি দেখা যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। বাংলাদেশে এর আগে কোথাও এ পাখি দেখা যায়নি। এর ইংরেজি নাম Largebilled Warbler থেকে বাংলায় ‘বড়ঠোঁট চুটকি’ নাম রাখা হয়েছে। পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম Acrocephalus orinus। মেটে রঙের এ পাখির ওজন ১০ গ্রাম। তবে পাখিটি পরিযায়ী—এটা ধারণা পাওয়া গেছে।’
ইনাম আল হক জানান, বাংলাদেশের নামাঙ্কিত রিং পাখিটির পায়ে পরিয়ে ধরা পড়ার আধঘণ্টার মধ্যেই বিলে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
গবেষক দলের অপর সদস্য থাইল্যান্ডের মাহিদল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ফিলিপ রাউন্ড প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ পাখির দেখা পাওয়ার পর দলের সবাই আনন্দে আত্মহারা। বাইক্কা বিলে আসা আমাদের সার্থক হয়েছে। আর এটা আবারও প্রমাণিত হয়েছে যে বাইক্কা বিলটি পাখিবৈচিত্র্যের দিক থেকে অনন্য। পৃথিবীতে অনেক অজানা বিষয় রয়েছে। এই পাখি সম্পর্কে তেমন বিস্তারিত তথ্য আমাদের কাছে নেই। পাখিটির পায়ে রিং পরানোর সৌভাগ্য আমাদের হয়েছে। আর এর পায়ে যে রিং পরানো হয়েছে, এতে বাংলাদেশের নাম রয়েছে। এর মাধ্যমে এ প্রজাতির পাখি সম্পর্কে দীর্ঘমেয়াদি গবেষণায় বাংলাদেশের নামটি যুক্ত হয়েছে।’
এ বছর শীতের শুরু থেকেই হাইল হাওরের বিভিন্ন বিলে প্রচুর দেশি ও বিদেশি পরিযায়ী পাখি আসতে শুরু করেছে। এর মধ্যে বাইক্কা বিলকে সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করায় পাখির সংখ্যা আগের বছরগুলোর তুলনায় এবার অনেক বেড়েছে।
বিশ্বজ্যোতি চৌধুরী, শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) প্রথম আলো
Reade more >>

Saturday, November 26, 2011

বিদ্যুতের মৃত্যুফাঁদে পরিযায়ী পাখি

দক্ষিণ আফ্রিকায় বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হয়ে মারা যাওয়া নীল সারস দক্ষিণ আফ্রিকায় বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হয়ে মারা যাওয়া নীল সারস
এএফপি
শীত থেকে বাঁচতে পরিযায়ী পাখিরা ছোটে দূরদেশে, যেখানে স্বচ্ছন্দে বিচরণ করা যাবে। এ জন্য তাদের পাড়ি দিতে হয় হাজার হাজার মাইল। দীর্ঘ ভ্রমণ শেষে ক্লান্ত পাখিগুলো যাও-বা ঠিকানা খুঁজে পায়, অনেক পাখিই প্রাণ হারায় বিদ্যুতের তারে ঝুলে থাকা মৃত্যুফাঁদে পড়ে।
নরওয়ের বেরগেনে ২০ থেকে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত পরিযায়ী পাখি নিয়ে অনুষ্ঠিত ‘কনভেনশন অন মাইগ্রেটরি স্পেসিজ’ শীর্ষক সম্মেলনে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়।
তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে সাত কোটি কিলোমিটার দীর্ঘ বিদ্যুতের তার টানা রয়েছে। শুধু আফ্রিকা ও ইউরেশিয়াতেই প্রতিবছর কয়েক লাখ পাখি এই বিদ্যুতের তারে স্পৃষ্ট হয়ে মারা যায়।
সম্মেলনে ডাচ্ পাখি গবেষক হেইন প্রিনসেন বলেন, শিকার ছাড়াও বিদ্যুতের তারের স্পর্শে অনেক পাখি মারা যায়। বৈশ্বিক উষ্ণতা ও মানুষের ধ্বংসযজ্ঞের কারণে পরিযায়ী পাখির অনেক আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে গেছে। এ কারণে এই পাখির সংখ্যাও দিন দিন কমে যাচ্ছে।
গবেষকদের মতে, অনেক প্রজাতির পাখি আছে, যেগুলোর বংশবৃদ্ধির হার কমে গেছে। তার ওপর এভাবে পাখি মারা যেতে থাকলে অনেক পাখির অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে। বিশেষ করে বিভিন্ন প্রজাতির সারসের ক্ষেত্রে দেখা যায়, একটি প্রাপ্তবয়স্ক সারস মারা গেলে খাবারের অভাবে এটির ছানাও মারা যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
রয়্যাল সোসাইটি ফর দ্য প্রটেকশন অব বার্ডসের সাবেক সদস্য জন ও’ সুলিভান বলেন, খুব শিগগির ভারত ও আফ্রিকায় সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। এই দুটি অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে বিদ্যুতের লাইন স্থাপন করা হচ্ছে। অথচ এখানে পাখির বাসও তুলনামূলক অনেক বেশি। তিনি বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় বিদ্যুতের তারের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রচুর নীল সারস মারা যাচ্ছে। এভাবে বছরে প্রায় ১২ শতাংশ সারস হারিয়ে যাচ্ছে। এএফপি। prothom-alo
Reade more >>

Sunday, October 23, 2011

 সাদা-কালোয় পাকড়া মাছরাঙা

পঞ্চগড়ের আটোয়ারীর সীমান্তবর্তী নাগরা-নাগরি নদীতে একজোড়া পাকড়া মাছরাঙা পঞ্চগড়ের আটোয়ারীর সীমান্তবর্তী নাগরা-নাগরি নদীতে একজোড়া পাকড়া মাছরাঙা
ছবি: লেখক
এরা ‘পাকড়া মাছরাঙা’ (Pied Kingfisher)। কড়িকাটা, ফটকা, চিতে বা ডোরাকাটা মাছরাঙা নামেও পরিচিত। সাদা-কালো হলেও খুব সুন্দর পাখি। এমনকি অনেকের মতে, এরাই এ দেশের মাছরাঙাদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর। বৈজ্ঞানিক নাম Ceryle rudis, অর্থাৎ তলোয়ারঠুঁটো পাখি।
এরা লম্বায় ৩১ সেন্টিমিটার। দেহের সাদা জমিনের ওপর কালো দাগ ও ফোঁটা। উড়ন্ত অবস্থায় দেহের রং আরও খুলে যায়। ডানায় সাদা-কালোর চমৎকার কারুকাজ। মাথার খোঁপা কালো। ঘাড় থেকে একটি চওড়া কালো টান চোখের নিচ হয়ে ঠোঁটের আগা পর্যন্ত চলে গেছে। গলার নিচে সাদা, তাতে দু-চারটি কালো ছোট ছোপ। লেজের আগা সাদা, নিচের কিছুটা অংশ কালচে। পুরুষ ও স্ত্রী দেখতে একরকম হলেও পুরুষের বুকে দুটো কালো রেখা রয়েছে; স্ত্রীর ক্ষেত্রে এই রেখা অসম্পূর্ণ। ঠোঁট মোটা ও শক্ত। ঠোঁট, পা ও নখ মেটে-কালো।
মূলত মাছখেকো হলেও ব্যাঙাচি ও জলজ পোকামাকড়ও খায়। দেশের সবখানেই কমবেশি দেখা যায়। সচরাচর জোড়ায় থাকে। নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর, এমনকি ছোটখাটো পানির উৎস প্রভৃতি স্থানে যেখানে খাবার আছে, সেখানেই ঘোরাফেরা করে। এরা চিররিক-চিররিক-চিররিক শব্দে ডাকে। উড়ন্ত অবস্থায় বেশি ডাকে।
ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল প্রধান প্রজননকাল হলেও সারা বছরই বাচ্চা তোলে। বাসা বানায় ডোবা-নালা-খাল-নদীর খাড়া পাড়ের দেয়ালে। পা ও ঠোঁট দিয়ে গর্ত খুঁড়ে। বাসার গভীরতা ৯০ থেকে ১০০ সেন্টিমিটার ও চওড়া সাত থেকে আট সেন্টিমিটার হতে পারে। বাসার স্থান নির্বাচনে বেশ বুদ্ধির পরিচয় দেয়। খাড়া দেয়ালের এমন স্থানে গর্ত করে, যেখানে সাপ-গুঁইসাপ বেয়ে উঠতে পারে না। গর্তের মুখ ছোট ও গভীরতা বেশি থাকায় মাংসাশী প্রাণী ও শিকারি পাখিরা ডিম-বাচ্চার ক্ষতি করতে পারে না। স্ত্রী গর্তের শেষ মাথায় পাঁচ থেকে সাতটি সাদা ডিম পাড়ে। ডিম ফোটে ১৯ থেকে ২২ দিনে। বাচ্চারা উড়তে শেখে ১৩ থেকে ১৬ দিনে।
এরা অত্যন্ত নিরীহ। শক্তিশালী ঠোঁট থাকতেও কারও সঙ্গে মারামারি করে না। আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে সুন্দর এই পাখিগুলো রক্ষা করা প্রয়োজন।
Reade more >>

Wednesday, October 19, 2011

 খুদে পাখি ভোমরা ছোটন

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে গুল্ম শাখায় বসে আছে ভোমরা ছোটন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে গুল্ম শাখায় বসে আছে ভোমরা ছোটন
ছবি: লেখক
ভোমরা ছোটন খাটো লেজের অতি খুদে তৃণচারী পাখি। দেহের দৈর্ঘ্য ১০ সেমি, ওজন ৭ গ্রাম। প্রধানত একাকী ও জোড়ায় চলে। তবে প্রজননের সময় কয়েক জোড়া পাখি একই সঙ্গে দেখা গেছে। এ বৈশিষ্ট্য মুন্সিগঞ্জের কাছে পদ্মার লৌহজং চরে পাখি দেখতে গিয়ে কয়েকবারই চোখে পড়েছে। খুদে এ পাখিটি খুব সামান্য দূরত্বে উড়ে বেড়ায় ঘাসবন থেকে নলবনে এবং কিছুক্ষণ পরপরই ‘যিট...যিট...যিট’ সুরে ডাকে। এরা বেড়ে ওঠে নদীতীরের নলবন, ঘাসবন ও ধানখেতে। খুব সকালেই এ পাখি তার দৈনন্দিন কাজ শুরু করে। শণ ও ঘাসের ডগায় ডগায় উড়ে বেড়ায় এবং শুকনো ধানখেতে নামে খাবারের সন্ধানে।
দেশের সব বিভাগের আর্দ্র আবাদি জমিতে পাখিটি দেখা যায়। ইউরোপের দক্ষিণাঞ্চল, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়ার উত্তরাঞ্চল, মালদ্বীপ ছাড়া উপগ্রীষ্মমণ্ডলীয় এশিয়াতে পাখিটির বিস্তৃতি রয়েছে। এর ইংরেজি নাম Zitting Cisticola। বৈজ্ঞানিক নাম Cisticola juncidis।
প্রাপ্তবয়স্ক ছোটন পাখির পিঠের পালক কালচে বাদামি দাগসমেত হালকা পীত বর্ণের। মাথার চাঁদি ধূসর-বাদামি। লেজ ফিকে। ছেলে ও মেয়ে উভয় পাখির চোখ পিঙ্গল বাদামি, জলপাই বাদামি বা খড় বর্ণের। পা ও পায়ের পাতা মেটে। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথায় মোটা লম্বা দাগ থাকে এবং দেহতল হলদে।
ফড়িং, পিঁপড়া, মাকড়সা, শুঁয়োপোকা, গুবরেপোকা ও ফলের বীজ আছে এদের প্রধান খাবার তালিকায়। শুকনো ঘাস ও পাতা-নল দিয়ে মার্চ-জুলাই মাসে নল বা শণের ডগায় ডিম্বাকৃতির বা মোচাকার বাসা বানায়। চার-পাঁচটি ডিম দেয়। ডিম ফিকে নীল। ডিম থেকে ১০ দিনেই ছানা ফোটে। মা-বাবা উভয়ে মিলেই সংসারের বাকি কাজ চালিয়ে যায়। দেশে পাখিটির সংখ্যা ভালোই আছে।

 প্রথম আলো
Reade more >>

Friday, October 14, 2011

লেজ যেন তার পাখা

ছানা বুকে নিয়ে বাসায় বসে আছে লেজ নাচুনে পাখি ছানা বুকে নিয়ে বাসায় বসে আছে লেজ নাচুনে পাখি
ছবি: মো. হানিফ
এমন আমুদে খেলুড়ে তথা ফুর্তিবাজ ও নাচুনে সুন্দরী পাখিটি যে প্রয়োজনে ধারণ করতে পারে রুদ্রমূর্তি, দুর্দান্ত সাহসে তেড়ে যেতে পারে শত্রুর দিকে, করতে পারে কুশলী আক্রমণ, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস হতে চায় না। এই বৈশিষ্ট্য যেন সম্পূর্ণ তার চরিত্রের বিপরীত। এই পাখিরা প্রজনন মৌসুমে নান্দনিক সৌন্দর্যমণ্ডিত নৃত্যগীতে মাতোয়ারা হয় গাছের মোটা ডালের মঞ্চে, মানকচুর পাতার মঞ্চে, ঘরের চালার মঞ্চে প্রেমিক-প্রেমিকা মুখোমুখি হয়ে পাখার পালক ফুলিয়ে লেজের সুবিন্যস্ত ১২ খানা পালককে জাপানি পাখা বানিয়ে ওপরে তুলে এনে ধ্রুপদি নৃত্যে মেতে ওঠে—ঘুরে ঘুরে নাচে ও গান গায়। তাদের মনোমুগ্ধকর সেই নৃত্যগীত দেখার পর যদি দেখা যায় যে ওই দুটি পাখিই চেঁচিয়ে বাগান মাত করছে, দুটিতে পরিকল্পিতভাবে দুই পাশ থেকে তীরের ফলার মতো নেমে এসে একটি গুইসাপের পিঠে বা বনবিড়ালের পিঠে ঠোকর দিচ্ছে, তাহলে বিস্মিত হতে হয় বৈকি।
হ্যাঁ, জাপানি পাখার মতো লেজের পালক মেলতে পারা, গাছের ডালে ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্রেমিক-প্রেমিকা মিলে নেচে-গেয়ে মেতে থাকা এমন পাখি বাংলাদেশে আর আছে কি! প্রজনন মৌসুমে এই পাখিরা ঠিক যেন লাইলী-মজনু হয়ে যায়।
পাখিটির নাম নাচুনে, প্রয়োজনে লেজের পালকগুলোকে এরা জাপানি পাখা বানিয়ে ফেলতে পারে। নাম তাই লেজনাচুনে। বৈজ্ঞানিক নাম Rhipidura albicollis. মাপ ১৯ সেন্টিমিটার। এই পাখিটি আমাদের গ্রামের বাড়ির বাগানে প্রতি মৌসুমে ২-১০টি বাসা করে। বাসা করত ছোট লেজনাচুনে বা নীলরাজা (Black-naped monarch) পাখিরা। স্বভাবে বাসা বাঁধার কৌশলে এই দুই জাতের পাখির মধ্যে খুবই মিল—মিল আছে খাদ্য তালিকায়ও। এ বছর (২০১১ সালের এপ্রিলে) আমাদের গ্রাম বাগেরহাটের সাতশৈয়ায় এই দুই জাতের বাসা দেখলাম ১৯টি।
লেজনাচুনেদের পছন্দ ছায়া ছায়া মায়া মায়া বনবাগান। এরা সারা দেশেই আছে। খাদ্য মূলত পোকা-মাকড়। বাসা করে খুব সুন্দর। গাছের সরু ডালে বা বাঁশের নুয়ে পড়া কঞ্চিতে। বাসার নিচে লেজের মতো ঝুলে থাকে বাসার উপকরণ। ঝড়ে কঞ্চি-বাসা যতই দোল খাক, বাসার ডিম-ছানা ছিটকে পড়ে না। কেন পড়ে না? কুশলী ও বুদ্ধিমান পাখি এরা। পুরো শরীর কালচে, তাতে হালকা ধূসরের আভা। গলা ও চোখের ভ্রূ সাদা। চোখের পাশটা কালো, লেজের ডগা সাদা। চোখ-ঠোঁট কালো। ডিম পাড়ে তিনটি। ডিম যেন সিমেন্টের প্রলেপ দেওয়া। বাসার চারপাশেও এমন প্রলেপ দেখা যায় কখনো কখনো। আশপাশের কোনো পাখি বিপদে পড়লে এরা সাহায্যে এগিয়ে আসে।
Reade more >>

Monday, September 26, 2011

 করুণ পাপিয়া

নারকেলগাছের ডগায় করুণ পাপিয়া। সম্প্রতি চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি বিভাগের খামার থেকে তোলা নারকেলগাছের ডগায় করুণ পাপিয়া। সম্প্রতি চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি বিভাগের খামার থেকে তোলা
ছবি: লেখক
বসতবাড়ির বাগানের যে অংশে মানুষের চলাচল কম, সেখানে গাছের ডালে চুপচাপ বসে আছে কমলা রঙের পালকে আবৃত এক পাখি। চলাফেরায় অচঞ্চল। লাজুকও বটে। বিলেতি গাবগাছের ডাল থেকে ক্যামেরা হাতে আমাকে দেখে পাখিটি ফুড়ুৎ উড়ালে হাওয়া। আর তার দেখা নেই। বরিশালের চরকাওয়ায় গত বছর হাতের কাছে পেয়েও তাকে ক্যামেরাবন্দী করা গেল না।
সুনামগঞ্জের পাথরচাউলি হাওড়ে গিয়ে আবার দেখা মিলল করুণ পাপিয়ার। সেবারও ব্যর্থ হলাম। ছবিতে ধরা দিল না সে। ভাবি, করুণ পাপিয়া আমার অবস্থাই তো করুণ করে তুলছে।
অবশেষে চাঁপাইনবাবগঞ্জে কৃষি বিভাগের খামারে গিয়ে ছবি তোলা গেল। সকালে রোদ পোহাতে পাখিটি আড়াল থেকে একটু খোলা জায়গায় এসে বসেছিল নারকেলগাছের ডগায়। বারবার তিনবার। তৃতীয়বারে মান রক্ষা হলো। ক্যামেরায় এল পাখিটি।
পাখিটির নাম করুণ পাপিয়া। পাঠ্যপুস্তকে আরেকটি নাম আছে তার—ছোট ভরাউ। ঘন গাছপালার বাগান, কৃষিজমি, খামার, মাঠে বিচরণ করে। দেশের সব বিভাগেই এর দেখা মেলে। ইন্দোনেশিয়াসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পাখিটির বসবাস। ইংরেজি নাম Plaintive Cuckoo। বৈজ্ঞানিক নাম Cacomantis merulinus।
পুরুষ পাখির পিঠের পালক ধূসর আর বুকের পালক কমলা রঙের। মাথা, ঘারের পাশ ও গলা ছাই-ধূসর। মেয়ে পাখির চেহারা দুই ধরনের। এক ধরনের চেহারা পুরুষ পাখির মতো। উভয় পাখির চোখ সাদা, পা বাদামি হলদে। প্রজননসময় পুরুষ পাখি মিষ্টি সুরে ডাকে। প্রধানত, একাকী; তবে জোড়ায়ও ঘুরে।
ছারপোকা, শুঁয়োপোকা আছে এ পাখির খাবার তালিকায়। বাসা তৈরি, ছানা লালন-পালন ও ডিম ফোটানোর কোনো কাজই এরা করে না। মেয়ে পাখি অন্য পাখির বাসায়, বিশেষ করে প্রিনা, টুনটুনির বাসায় ডিম পাড়ে। ডিমের রং পালক সাদা থেকে ফিকে নীল। ছানার পালকমাতারাই খাওয়ায়, বড় করে তোলে। এটা সত্যিই করুণ। আপন মা-বাবার আদর-যত্ন পায় না এরা। একদিন আত্মনির্ভরশীল হলে বনে ফিরে যায় ছোট্ট করুণ পাপিয়া, সৌরভ মাহমুদ Prothom-alo
Reade more >>

 ‘নিজ হাতে গড়া মোর কাঁচা ঘর খাসা’

‘বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই/কুঁড়েঘরে থেকে করো শিল্পের বড়াই’—চড়ুই যদি সত্যিই জানত যে বাবুই কত বড় শিল্পী, তাহলে এমন করে ব্যঙ্গ করার ঔদ্ধত্য দেখাত কি? প্রকৃত শিল্পী ও শিল্পের কদর মানুষই ঠিকমতো দিতে পারে না, সেখানে চড়ুই কোন ছাড়!
তবে বড় দেরি করে হলেও একদল গবেষক অবশেষে আবিষ্কার করেছে, বাবুই পাখিরা (Weaver Bird) তাদের বাসা তৈরির কলাকৌশল অতি সযতনে রপ্ত করে। এ সম্পর্কে বিবিসিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে গবেষকেরা সম্প্রতি এমন তথ্যই দিয়েছেন।
Passeriformes বর্গের Passeridae গোত্রের চড়ুই-সদৃশ বাবুই পাখির ওপর বতসোয়ানার একদল বিজ্ঞানী একটি ভিডিও চিত্র নির্মাণ করেন। এডিনবার্গ, গ্লাসগো ও সেন্ট এন্ড্রিউ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা সেই ভিডিও চিত্রটি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান। চমত্কার বুনটের ঝুড়ির মতো বাসা তৈরির জন্য পাখিটি সুপরিচিত। এ জন্য এই পাখিকে অনেকে তাঁতি পাখিও বলে থাকেন। এদের ঝুলন্ত বাসায় প্রবেশের সুড়ঙ্গ পথ বেশ আঁঁকাবাঁকা।
এডিনবার্গ স্কুল অব বায়োলজিক্যাল সায়েন্সের গবেষক পেট্রিক ওয়ালেস বলেন, ‘এই গবেষণাটি আমাদের নতুন অভিজ্ঞতার দুয়ার খুলে দিয়েছে।’
পেট্রিক ওয়ালেস বলেন, যেসব পাখি একই জিনগত বৈশিষ্ট্য বহন করে, তাদের তৈরি বাসাগুলো একই রকম হয়। বিহ্যাভিয়ারাল প্রসেসেস জার্নাল নামে একটি পত্রিকায় গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে।
ওয়ালেস বলেন, পাখিদের ক্ষেত্রে ‘প্র্যাকটিস মেকস পারফেক্ট’ কথাটা খুবই সত্য।
তারা চেষ্টা করতে করতে সুন্দর বাসা তৈরির কৌশলটা রপ্ত করেছে। ওয়ালেস বলেন, তবে সব পাখির ক্ষেত্রে বিষয়টা এক রকম নয়।
গবেষকেরা তাঁদের প্রতিবেদন তৈরির জন্য আফ্রিকার রঙিন পাখি বেছে নিয়েছেন। কারণ হিসেবে তাঁরা বলেন, প্রত্যেক মৌসুমে একেকটি পাখি এ রকম অনেক জটিল বাসা তৈরি করে। এটা তাদের অধিক বুদ্ধিমত্তারই বহিঃপ্রকাশ। আর তাই কেবল এই পাখিরাই দম্ভ করে বলতে পারে, ‘কাঁচা হোক তবু ভাই নিজের বাসা/নিজ হাতে গড়া মোর কাঁচা ঘর খাসা।’
Reade more >>

Friday, July 29, 2011

মাঠের পাখি ভরত

আ ন ম আমিনুর রহমান
 কয়েক দিন আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের (বশেমুরকৃবি) মাঠে হাঁটার সময় দেখি, ছোট্ট একটি পাখি মুখে পোকা নিয়ে নামছে। পাখিটি মাটি থেকে যখন ইঞ্চি ছয়েক ওপরে, ঠিক তখন কোত্থেকে একটি ফিঙে এসে আক্রমণ করল তাকে। উদ্দেশ্য, পোকাটি ছিনিয়ে নেওয়া।
ছোট্ট পাখিটি প্রাণপণে উড়াল দিল, পেছন পেছন ফিঙেও। দু-একটা ঠোকরও বসিয়ে দিল, কিন্তু পোকাটি ছিনিয়ে নিতে পারল না। দাঁড়িয়ে দেখছি সেই চমৎকার দৃশ্য। মিনিট দুই-তিন ধাওয়ার পর হঠাৎ পাখিটি মাটিতে নেমে দৌড়ে পাশের ছোট্ট ঝোপালো গাছের তলায় লুকাল। ফিঙে অনেক চেষ্টা করেও সেখানে ঢুকতে পারল না। অগত্যা গিয়ে বসল গাছের ডালে, কিন্তু নজর রাখল পাখিটির দিকে। ওদিকে ছোট্ট পাখিটি দুরু দুরু বুকে গাছের তলায় ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। কোনো শব্দ করছে না; পালানোর পথ খুঁজছে। মিনিট পাঁচেক পর ফিঙে রণে ভঙ্গ দিয়ে উড়ে গেল। যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল পাখিটি। তারপর লাফাতে লাফাতে একটু ঘোরাপথে তার বাসার সামনে চলে গেল। সেখানে অপেক্ষা করছিল সাত দিন বয়সী ক্ষুধার্ত তিনটি ছানা। ছানাদের ঝটপট খাইয়ে বের হয়ে এল; একটু হেঁটে এদিক-ওদিক তাকিয়ে অল্প উড়ে গিয়ে পাশের মাঠে আবার খাবার খুঁজতে লাগল পাখিটি।

এতক্ষণ যে পাখিটির কথা বললাম, সেটি হচ্ছে নাড়া-আইল-মাঠ-ঘাসবনের একরত্তি পাখি ভরত। তবে মাঠের সবচেয়ে ছোট্ট পাখি নয় এটি। ভরত অ্যালাউডিডি পরিবারভুক্ত। ইংরেজি নাম Rufous-winged বা Bengal Bush Lark; বৈজ্ঞানিক নাম Mirafra assamica. এ দেশের সব জায়গায় আছে। আমাদের সাত প্রজাতির ভরতের পাঁচটি স্থায়ী ও দুটি পরিযায়ী। দেখতে চড়ুই-বাবুইদের মতো; কিছুটা মোটা। লম্বা ১৫ সেন্টিমিটার। মাথার ওপর থেকে পিঠ হয়ে লেজের ওপরটা ধূসর ও তাতে কালচে ডোরা। বুক, পেট ও লেজের গোড়া ধূসর-হলুদ; তাতে লালচে আভা। বুকে বেশ কিছু কালচে দাগ। ডানার দুই পাশ লালচে; লেজের দুই পাশ ও মুখমণ্ডলেও লালচে আভা। মাথায় হালকা ঝুঁটি, ভয় পেলে যা জেগে ওঠে। হালকা হলুদ ঠোঁটের ওপর পোড়ামাটির আভা। পা, আঙুল ও নখও একই রঙের। পুরুষ পাখি ও মহিলা পাখি দেখতে একই রকম। তবে মহিলা পাখিটি পুরুষটির থেকে খানিকটা মোটা ও হালকা রঙের।
ভরত ঘাস ও ঝোপঝাড়পূর্ণ খড়খড়ে মাঠ, ধানের গোড়া আছে এমন কৃষিজমি, খেতের আইল, ছোট ছোট ঝোপ ধরে হাঁটে ও খাবার সংগ্রহ করে। বশেমুরকৃবিতে আমি ও আমার পাখি পর্যবেক্ষণের সঙ্গী কামাল প্রায় এক বছর শ খানেক ভরতের ওপর নজর রাখছি। এরা একাকি, জোড়ায় বা চার-পাঁচটির দলে থাকে। এখানকার একেকটি মাঠে ৪-১৬টি পাখি বাস করছে। এরা পোকামাকড়, ঝরা ধান, ঘাসের বীজ, কচি ঘাসের ডগা খেতে পছন্দ করে। পানি পান করে কম। ঝড় এলে মাটিতে ঘাপটি মেরে পড়ে থাকে।
ভরতের ওড়ার ভঙ্গিমা বৈচিত্র্যপূর্ণ। মাটি থেকে সোজা ওপর দিকে উঠে যায়। তারপর আকাশে অনেকটা সাঁতার কাটার মতো ওড়ে। নামেও সোজাভাবে, তবে শেষদিকে খানিকটা ঘুরে নামে। পুরুষ ভরত সুন্দর ঢঙে গান গায়। এমন সুন্দর গান মাঠের আর কোনো পাখি গায় কি না, সন্দেহ আছে। বাসা তৈরি, ডিম পাড়া ও বাচ্চা হলে পুরুষগুলো আনন্দে আটখানা হয়ে নাচে ও গান গায়। আকাশের ওপরে উঠে ‘চিররা, চিরোরা, চিরোরা’, স্বরে ডাকতে থাকে।
ভরত নিরীহ পাখি; বেশ সাবধানি ও চতুর। এরা বর্ষার আগে, বসন্ত থেকে গরমকালের মধ্যে বাসা বানায়। উলুঘাসের তলা, চওড়া-ঘন আইল বা ঘাসবনের ভেতরটাই বেশি পছন্দ। সরু শুকনো ঘাস, ধানপাতা বা খড় দিয়ে ছোট বাটির মতো বাসা বানায়; মুখটি গোলাকার। সময় লাগে পাঁচ দিন। সাধারণত ডিম পাড়ে তিনটি। ডিমের রং সাদা, ওপরে কালো বা খয়েরি ছোট ছোট ছিট। ডিম ফোটে ১০-১৩ দিনে। আমরা এখন পর্যন্ত আটটি বাসা পর্যবেক্ষণ করেছি। প্রতিটিতে তিনটি করে ডিম ছিল। মাঠের সাপ, গুইসাপ, বেজি ও শিয়াল ঘোরাঘুরি করলেও সহজে ডিম-বাচ্চার খোঁজ পায় না। কিন্তু রাখাল, ঘুঁটে কুড়ানি ও দুষ্টু ছেলের দল ঠিকই খুঁজে পায় ও ডিম-বাচ্চা নষ্ট করে। সম্ভবত একটি বাসার ডিম দুষ্টু ছেলেরা নিয়ে গিয়েছিল। বাকিগুলোতে তিনটি করে বাচ্চা হয়েছিল। বাচ্চারা বাসা ছাড়ে ১০-১২ দিনে। এ সময় এরা উড়তে পারে না; মা-বাবার পেছন পেছন হেঁটে বেড়ায় ও মুখ হাঁ করে পাখা নাচিয়ে কাঁদতে থাকে। ছানারা ওড়ে ২৪-২৫ দিনে। বিপদের গন্ধ পেলে বাচ্চারা মুহূর্তের মধ্যে মাটির সঙ্গে বা ঘাসের মধ্যে বুক মিশিয়ে পরিবেশের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। ভরত মৌসুমে সাধারণত দুবার বাচ্চা তোলে। বাঁচে ১২-১৫ বছর ।প্রথম আলো
Reade more >>

Saturday, July 16, 2011

অতিথিরা স্থায়ী, কালুহাটি এখন পাখির গ্রাম

রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার কালুহাটি গ্রামের একটি আম গাছে বাসা বেঁধেছে অতিথি পাখিরা রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার কালুহাটি গ্রামের একটি আম গাছে বাসা বেঁধেছে অতিথি পাখিরা
ছবি: শহীদুল ইসলাম
এক গাছে এত পাখি! থমকে দাঁড়াচ্ছে পথচারী। এ কারণে প্রায় সারা দিনই আমজাদ মাস্টারের বাড়ির সামনে মানুষের ভিড় লেগেই আছে।
এগুলো আসলে অতিথি পাখি। প্রতিবছর শীতে আসে আবার শীতের শেষে চলে যায়। কিন্তু বছর তিনেক ধরে পাখিগুলো রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার কালুহাটি গ্রামেই স্থায়ীভাবে বসবাস করছে। বাসা বাঁধে, ডিম দেয় ও বাচ্চা ফোটায়। এরা সবাই শামুকখোল। গ্রামবাসীও এদের প্রশ্রয় দিয়েছে। পাখি মারা তো দূরের কথা, রীতিমতো ওদের পাহারা দিয়ে রাখে তারা।
চারঘাট উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে নিভৃত গ্রাম কালুহাটি। ঘটনা তিন বছর আগের। গ্রামের একটি শিমুলগাছের মগডালে কয়েকটি অতিথি পাখি এসে বসে। কেউ উৎপাত করছে না দেখে পাখিগুলো কিছুদিন পর নিচের ডালগুলোতে নেমে আসে। গ্রামের লোকেরা অবাক হয়ে দেখল, এসব পাখির শীত শেষে চলে যাওয়ার কথা, অথচ ওরা বাসা বাঁধছে। নিরাপদ আশ্রয় পাওয়ায় প্রতিবছরই বাড়ছে পাখির সংখ্যা।
গ্রামের বাড়ি-ডাকরা ডিগ্রি কলেজের ছাত্র লিটন মাহমুদ জানান, প্রথমবার শিমুলগাছের নিচের হালকা একটা ডালে এত বেশি পাখি বাসা বেঁধেছিল যে, ভার সইতে না পেরে ডাল ভেঙে অনেক পাখির বাসা নিচে পড়ে ডিম ভাঙে ও বাচ্চা মরে যায়। এ ঘটনায় গ্রামের লোকেরা বেশ মর্মাহত হয়। এর পর থেকেই পাখিদের জন্য গ্রামবাসীর মনে অন্যরকম একটা মায়া জন্মায়। সবাই পাখিদের প্রতি খেয়াল রাখে।
এখন পাখিগুলো পুরো গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে তারা বাসা বাঁধার সময় কয়েকটি নির্দিষ্ট গাছ বেছে নিচ্ছে। এবার পাখিগুলো বাসা বাঁধছে গ্রামের স্কুলশিক্ষক আমজাদ হোসেনের দুটি আমগাছে ও রূপচান আলীর কড়ইগাছে।
কালুহাটি গ্রামে একবেলা: গত বৃহস্পতিবার সকালে কালুহাট গ্রামে ঢুকে কাউকে জিজ্ঞেস করতে হয়নি, অতিথি পাখিরা কোথায় থাকে? দূর থেকেই চোখে পড়ে স্কুলশিক্ষক আমজাদ হোসেনের আমগাছাটি পাখিতে পাখিতে সাদা হয়ে আছে। গাছের গা ঘেঁষে রাস্তা। সেই রাস্তা দিয়ে বিকট শব্দে ভটভটিসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচল করছে। মোটরসাইকেল ও সাইকেল আরোহীরা কৌতূহলী হয়ে গাছটার কাছে এসে একটু থেমে পাখিদের কাজকর্ম দেখছে। এতে করে গাছটির পাশে সারাক্ষণ মানুষের জটলা লেগেই আছে। কিন্তু পাখিগুলো মানুষকে ভয় পাচ্ছে না মোটেই। ভীষণ ব্যস্ত ওরা নিজের কাজে।
গাছের মালিক আমজাদ হোসেন জানান, আম পেড়ে নেওয়ার পরপরই পাখিরা এসে গাছটিতে বাসা করেছে। তিনি খুবই অবাক হয়েছেন, পাখিরা পাশের অন্য একটি গাছে ছিল। আম পাড়ার আগে তারা আসেনি। এখন পুরো গাছ তাদের দখলে। ডালপালা ভেঙে বাসা করেছে। পরের মৌসুমে গাছে আর আম ধরবে না বলে তাঁর এক আত্মীয় পাখিগুলোকে তাড়িয়ে দিতে বলেছেন। কিন্তু তিনি তাঁর আত্মীয়র কথা শোনেননি। তিনি বলেন, এই পাখি ডাকলেও আসবে না। এত সুন্দর পাখি স্বেচ্ছায় তাঁর গাছে আশ্রয় নিয়েছে। টাকা খরচ করেও এমন সুন্দর একটা পরিবেশ তৈরি করা যাবে না। তা ছাড়া অতিথি পাখি মারা সরকার থেকেই নিষেধ আছে। তাই তিনি সাধ্যমতো পাখিদের দেখাশোনা করছেন, কেউ যেন তাদের বিরক্ত না করে।
গাছটির এমন কোনো ডাল নেই, যেখানে পাখির বাসা নেই। ছোট ডালপালা ভেঙে বাসায় জড়ো করে বাসা তৈরি করেছে। ওদের কাজ দেখে চোখ ফেরানো যায় না। কোনোটা বাচ্চার মুখে খাবার দিচ্ছে। কোনোটা বাসা তৈরির জন্য গাছের ডাল ভাঙছে। ঠোকাঠুকি করছে বা দু-তিনটা মিলে গায়ে গা লাগিয়ে বসে রয়েছে। আবার কোনোটা অন্য গাছের ডাল ভেঙে নিয়ে আসছে ঠোঁটে করে। বাসায় ধূসর রঙের বাচ্চারা হাঁ করে বসে আছে। ভয়ডর তো নেই, চলাফেরায়ও অবাধ স্বচ্ছন্দ। গ্রামটা যেন তাদেরই।
পাখিদের পাহারায় গ্রামবাসী: গ্রামের মুদি দোকানি তোতা বলেন, ‘প্রথম দিকে অন্য গ্রাম থেকে বন্দুক নিয়ে কয়েকবার পাখি মারতে এসেছে কিছু লোক। আমরা তাদের বের করে দিয়েছি। সবাই জেনে গেছে কালুহাটি গ্রামে বন্দুক নিয়ে কেউ পাখি মারতে গেলে তার বিপদ আছে।’ গ্রামবাসী জানাল, এই পাখি দিনের বেলায় মাঠে চরে বেড়ায়। সেখানেও সবাইকে বলে দেওয়া আছে, কেউ যেন পাখি না মারে। মাঠে যে শ্রমিকেরা কাজ করেন, তাঁরাও এ ব্যাপারে সতর্ক থাকেন।
তবে গ্রামবাসী পেরে উঠছে না কাকের সঙ্গে। সুযোগ পেলেই কাক এসে শামুকখোলের বাসা থেকে ডিম নিয়ে যাচ্ছে। কাক তাড়াতে গেলে যদি পাখিগুলো ভয় পেয়ে চলে যায়, সে কারণে তারা কাকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না।
কলকাকলিমুখর পাখির গ্রাম: কালুহাটি গ্রামটি এখন পাখির গ্রাম বলেই পরিচিতি পেয়েছে আশপাশে। সারা রাত এসব পাখির কলকাকলিতে গ্রাম মুখরিত হয়ে থাকে। গ্রামের সুখদা বেগম বলেন, ‘রাতে এই গ্রামে কোনো নতুন মানুষ এলে ভয়ই পাবে। আমাদের দেশি পাখিরা প্রহরে প্রহরে কিচিরমিচির করে, কিন্তু এই পাখির ডাক বেশ অন্য রকম। অনেক দূর থেকেও শোনা যায় সেই ডাক।’
প্রথম আলো
Reade more >>

Tuesday, July 12, 2011

আমাদের বাঁশঘুঘু

বাঁশঝাড়ে বাঁশঘুঘু ডিমে তা দিচ্ছেবাঁশঝাড়ে বাঁশঘুঘু ডিমে তা দিচ্ছে
গোলাপিকণ্ঠী ও লালবুক টিয়া সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা চিড়িয়াখানায় গিয়েছিলাম। ফেরার পথে পাখির খাঁচার দিকে একটু ঢুঁ দিতে গেলাম। ঘুঘুর খাঁচার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ চোখে পড়ল বাঁশঘুঘু খাঁচার ভেতরের ছোট বাঁশঝাড়টাতে বাসা তৈরি করে বসে আছে। 
চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ যদিও এদের জন্য কবুতরের খোঁপের মতো বাসা তৈরি করে দিয়েছে, কিন্তু এরা বাঁশঝাড়েই নিজেদের বাসা বানাতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। পাখির তত্ত্বাবধায়ককে খাঁচার সামনেই পেলাম। তাঁর কাছে জানলাম, প্রায় দুই বছর পর বাঁশঘুঘু বাসা বেঁধেছে। খাঁচায় বাঁশঘুঘু আছে পাঁচটি।
কী হলো, খোঁজ নিতে আবার চিড়িয়াখানা গেলাম এপ্রিলের শুরুতে। ভেবেছিলাম, খাঁচায় নিশ্চয় বাঁশঘুঘুর সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু গুণে দেখলাম পাঁচটিই রয়েছে। ব্যাপারটা কী? তত্ত্বাবধায়ক বললেন, দর্শনার্থীরা বিরক্ত করায় বাসা তৈরি করলেও শেষ পর্যন্ত ডিম পাড়েনি। মন খারাপ করে চলে এলাম। 
তবে খোঁজ রাখলাম নিয়মিতই এবং খবর পেলাম আবার বাসা বেঁধেছে বাঁশঘুঘু। পাখিবিশারদ শরীফ খান খবর দিলেন, চিড়িয়াখানায় এবার বাঁশঘুঘুর ডিম ফুটেছে। ছানা হয়েছে একটি। 
এপ্রিলের শেষ নাগাদ গিয়ে দেখতে পেলাম এবার বাঁশঘুুঘুর সংখ্যা ছয়টি। বাবা-মায়ের সঙ্গে বেশ আমোদ-আহ্লাদ করছে ছোট্ট ছানাটি। বেশ ভালো লাগল।
বাঁশঘুঘু এ দেশে ‘সবুজ ঘুঘু’ নামে বেশি পরিচিত। এদের কোথাও কোথাও ‘পাতি শ্যামাঘুঘু’ও বলে। বাঁশবন বা বাঁশঝাড়ে বেশি দেখা যায় বলে এরা বাঁশঘুঘু নামে পরিচিত। ১৯৯৬ সালে বাগেরহাটে এই নামটি শুনেছি। তখন থেকেই নামটি আমার মনে ধরেছে। বাঁশঘুঘুকে ইংরেজিতে Common বা Green emerald dove, Bronze-winged dove বা Green-winged pigeon বলা হয়। বৈজ্ঞানিক নাম Chalcophas indica বা Columba indica. অনেকের মতে, এ দেশের বিভিন্ন প্রজাতির ঘুঘুর মধ্যে বাঁশঘুুঘুই সবচেয়ে সুন্দর। 
বাঁশঘুঘু লম্বায় ২৭ সেন্টিমিটার ও ওজন ১৩০ থেকে ১৩৫ গ্রাম। এদের ডানা ও পিঠ সবুজ। পিঠের নিচে দুটো সাদা দাগ; তার মাঝখানে একটি কালো দাগ। পুরুষ পাখি বা পায়রার দেহের ওপরের অংশ চকচকে পান্না সবুজ। মাথা ধূসর, কপাল, থুঁতনি ও ভুরু সাদা। কাঁধের ওপরে ছোট সাদা দাগ। লেজ ও ডানার ওড়ার পালক কালচে। মাথার দুই পাশ ও দেহের নিচের অংশ সুন্দর লালচে বাদামি (বা গোলাপি)। পায়রি দেখতে পায়রার মতো হলেও মাথা, থুঁতনি ও কাঁধের ওপরের অংশ বাদামি। কপাল ও ভুরু ধূসর। পায়রির দেহের নিচের অংশ গাঢ় বাদামি। পায়রা-পায়রি উভয়ের ঠোঁট উজ্জ্বল লাল বা গোলাপি লাল। পা ও নখ গোলাপি। বাচ্চা দেখতে অনেকটা মায়ের মতো হলেও এদের ঠোঁট বাদামি-ধূসর, কপালে দুটো ধূসর দাগ, লেজের দিকটা লালচে-বাদামি, গলা ও দেহের নিচের অংশের পালকের প্রান্ত হলদে।
বাঁশঘুঘু মূলত পাতাঝরা, চিরসবুজ, শাল ও বাঁশবনের বাসিন্দা। সুন্দরবনে প্রচুর আছে। সিলেটের বিভিন্ন বনেও আছে বেশ। একসময় প্রায় সারা দেশেই গ্রামাঞ্চলে দেখা যেত। কিন্তু শিকারিদের কবলে পড়ে এবং বাঁশঝাড় ও ঝোপজঙ্গল কমে যাওয়ায় বর্তমানে তেমন একটা দেখা যায় না। বলা যায় বিপন্ন। তবে বাগেরহাটের গ্রামীণ বনগুলোতে এরা এখনো মোটামুটি আছে। বাঁশঘুঘু একাকী, জোড়ায় বা ছোট দলে থাকে। এরা গাছ বা বাঁশঝাড়ের তলায় হেঁটে হেঁটে শস্যদানা, ফল, বিচি ও উইপোকা খায়। বনের ধারে নির্জন খোলা জায়গায় কিংবা রাস্তার ধারে খুব ভোরে, ভরদুপুরে বা সন্ধ্যার আগে আগে খাবার খেতে নামে। সাধারণত খেতখামারে এদের দেখা যায় না। এরা মানুষকে বেশ ভয় পায় ও এড়িয়ে চলে। বনের ভেতরে খুব কম উচ্চতায়ও বেশ দ্রুতগতিতে উড়তে পারে। এদের গলার স্বর বেশ নরম, ‘হু-হু-হুন’ স্বরে ডাকে। সারা বছর প্রজনন করতে পারলেও সাধারণত বর্ষার আগে ডিম দেয় বেশি। ছোট গাছ, বাঁশঝাড় বা ঝোপঝাড়ে কয়েকটি কাঠিকুটি জড়ো করে ছোট্ট ও অগোছালো বাসা বানায়। পায়রি দুটো হালকা ঘিয়ে বা হলদে রঙের ডিম পাড়ে। ডিম ফোটে ১২ দিনে।


Reade more >>