Pages

Ads 468x60px

Monday, September 26, 2011

 করুণ পাপিয়া

নারকেলগাছের ডগায় করুণ পাপিয়া। সম্প্রতি চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি বিভাগের খামার থেকে তোলা নারকেলগাছের ডগায় করুণ পাপিয়া। সম্প্রতি চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি বিভাগের খামার থেকে তোলা
ছবি: লেখক
বসতবাড়ির বাগানের যে অংশে মানুষের চলাচল কম, সেখানে গাছের ডালে চুপচাপ বসে আছে কমলা রঙের পালকে আবৃত এক পাখি। চলাফেরায় অচঞ্চল। লাজুকও বটে। বিলেতি গাবগাছের ডাল থেকে ক্যামেরা হাতে আমাকে দেখে পাখিটি ফুড়ুৎ উড়ালে হাওয়া। আর তার দেখা নেই। বরিশালের চরকাওয়ায় গত বছর হাতের কাছে পেয়েও তাকে ক্যামেরাবন্দী করা গেল না।
সুনামগঞ্জের পাথরচাউলি হাওড়ে গিয়ে আবার দেখা মিলল করুণ পাপিয়ার। সেবারও ব্যর্থ হলাম। ছবিতে ধরা দিল না সে। ভাবি, করুণ পাপিয়া আমার অবস্থাই তো করুণ করে তুলছে।
অবশেষে চাঁপাইনবাবগঞ্জে কৃষি বিভাগের খামারে গিয়ে ছবি তোলা গেল। সকালে রোদ পোহাতে পাখিটি আড়াল থেকে একটু খোলা জায়গায় এসে বসেছিল নারকেলগাছের ডগায়। বারবার তিনবার। তৃতীয়বারে মান রক্ষা হলো। ক্যামেরায় এল পাখিটি।
পাখিটির নাম করুণ পাপিয়া। পাঠ্যপুস্তকে আরেকটি নাম আছে তার—ছোট ভরাউ। ঘন গাছপালার বাগান, কৃষিজমি, খামার, মাঠে বিচরণ করে। দেশের সব বিভাগেই এর দেখা মেলে। ইন্দোনেশিয়াসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পাখিটির বসবাস। ইংরেজি নাম Plaintive Cuckoo। বৈজ্ঞানিক নাম Cacomantis merulinus।
পুরুষ পাখির পিঠের পালক ধূসর আর বুকের পালক কমলা রঙের। মাথা, ঘারের পাশ ও গলা ছাই-ধূসর। মেয়ে পাখির চেহারা দুই ধরনের। এক ধরনের চেহারা পুরুষ পাখির মতো। উভয় পাখির চোখ সাদা, পা বাদামি হলদে। প্রজননসময় পুরুষ পাখি মিষ্টি সুরে ডাকে। প্রধানত, একাকী; তবে জোড়ায়ও ঘুরে।
ছারপোকা, শুঁয়োপোকা আছে এ পাখির খাবার তালিকায়। বাসা তৈরি, ছানা লালন-পালন ও ডিম ফোটানোর কোনো কাজই এরা করে না। মেয়ে পাখি অন্য পাখির বাসায়, বিশেষ করে প্রিনা, টুনটুনির বাসায় ডিম পাড়ে। ডিমের রং পালক সাদা থেকে ফিকে নীল। ছানার পালকমাতারাই খাওয়ায়, বড় করে তোলে। এটা সত্যিই করুণ। আপন মা-বাবার আদর-যত্ন পায় না এরা। একদিন আত্মনির্ভরশীল হলে বনে ফিরে যায় ছোট্ট করুণ পাপিয়া, সৌরভ মাহমুদ Prothom-alo
Reade more >>

 ‘নিজ হাতে গড়া মোর কাঁচা ঘর খাসা’

‘বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই/কুঁড়েঘরে থেকে করো শিল্পের বড়াই’—চড়ুই যদি সত্যিই জানত যে বাবুই কত বড় শিল্পী, তাহলে এমন করে ব্যঙ্গ করার ঔদ্ধত্য দেখাত কি? প্রকৃত শিল্পী ও শিল্পের কদর মানুষই ঠিকমতো দিতে পারে না, সেখানে চড়ুই কোন ছাড়!
তবে বড় দেরি করে হলেও একদল গবেষক অবশেষে আবিষ্কার করেছে, বাবুই পাখিরা (Weaver Bird) তাদের বাসা তৈরির কলাকৌশল অতি সযতনে রপ্ত করে। এ সম্পর্কে বিবিসিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে গবেষকেরা সম্প্রতি এমন তথ্যই দিয়েছেন।
Passeriformes বর্গের Passeridae গোত্রের চড়ুই-সদৃশ বাবুই পাখির ওপর বতসোয়ানার একদল বিজ্ঞানী একটি ভিডিও চিত্র নির্মাণ করেন। এডিনবার্গ, গ্লাসগো ও সেন্ট এন্ড্রিউ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা সেই ভিডিও চিত্রটি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান। চমত্কার বুনটের ঝুড়ির মতো বাসা তৈরির জন্য পাখিটি সুপরিচিত। এ জন্য এই পাখিকে অনেকে তাঁতি পাখিও বলে থাকেন। এদের ঝুলন্ত বাসায় প্রবেশের সুড়ঙ্গ পথ বেশ আঁঁকাবাঁকা।
এডিনবার্গ স্কুল অব বায়োলজিক্যাল সায়েন্সের গবেষক পেট্রিক ওয়ালেস বলেন, ‘এই গবেষণাটি আমাদের নতুন অভিজ্ঞতার দুয়ার খুলে দিয়েছে।’
পেট্রিক ওয়ালেস বলেন, যেসব পাখি একই জিনগত বৈশিষ্ট্য বহন করে, তাদের তৈরি বাসাগুলো একই রকম হয়। বিহ্যাভিয়ারাল প্রসেসেস জার্নাল নামে একটি পত্রিকায় গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে।
ওয়ালেস বলেন, পাখিদের ক্ষেত্রে ‘প্র্যাকটিস মেকস পারফেক্ট’ কথাটা খুবই সত্য।
তারা চেষ্টা করতে করতে সুন্দর বাসা তৈরির কৌশলটা রপ্ত করেছে। ওয়ালেস বলেন, তবে সব পাখির ক্ষেত্রে বিষয়টা এক রকম নয়।
গবেষকেরা তাঁদের প্রতিবেদন তৈরির জন্য আফ্রিকার রঙিন পাখি বেছে নিয়েছেন। কারণ হিসেবে তাঁরা বলেন, প্রত্যেক মৌসুমে একেকটি পাখি এ রকম অনেক জটিল বাসা তৈরি করে। এটা তাদের অধিক বুদ্ধিমত্তারই বহিঃপ্রকাশ। আর তাই কেবল এই পাখিরাই দম্ভ করে বলতে পারে, ‘কাঁচা হোক তবু ভাই নিজের বাসা/নিজ হাতে গড়া মোর কাঁচা ঘর খাসা।’
Reade more >>