Pages

Ads 468x60px

Friday, July 29, 2011

মাঠের পাখি ভরত

আ ন ম আমিনুর রহমান
 কয়েক দিন আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের (বশেমুরকৃবি) মাঠে হাঁটার সময় দেখি, ছোট্ট একটি পাখি মুখে পোকা নিয়ে নামছে। পাখিটি মাটি থেকে যখন ইঞ্চি ছয়েক ওপরে, ঠিক তখন কোত্থেকে একটি ফিঙে এসে আক্রমণ করল তাকে। উদ্দেশ্য, পোকাটি ছিনিয়ে নেওয়া।
ছোট্ট পাখিটি প্রাণপণে উড়াল দিল, পেছন পেছন ফিঙেও। দু-একটা ঠোকরও বসিয়ে দিল, কিন্তু পোকাটি ছিনিয়ে নিতে পারল না। দাঁড়িয়ে দেখছি সেই চমৎকার দৃশ্য। মিনিট দুই-তিন ধাওয়ার পর হঠাৎ পাখিটি মাটিতে নেমে দৌড়ে পাশের ছোট্ট ঝোপালো গাছের তলায় লুকাল। ফিঙে অনেক চেষ্টা করেও সেখানে ঢুকতে পারল না। অগত্যা গিয়ে বসল গাছের ডালে, কিন্তু নজর রাখল পাখিটির দিকে। ওদিকে ছোট্ট পাখিটি দুরু দুরু বুকে গাছের তলায় ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। কোনো শব্দ করছে না; পালানোর পথ খুঁজছে। মিনিট পাঁচেক পর ফিঙে রণে ভঙ্গ দিয়ে উড়ে গেল। যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল পাখিটি। তারপর লাফাতে লাফাতে একটু ঘোরাপথে তার বাসার সামনে চলে গেল। সেখানে অপেক্ষা করছিল সাত দিন বয়সী ক্ষুধার্ত তিনটি ছানা। ছানাদের ঝটপট খাইয়ে বের হয়ে এল; একটু হেঁটে এদিক-ওদিক তাকিয়ে অল্প উড়ে গিয়ে পাশের মাঠে আবার খাবার খুঁজতে লাগল পাখিটি।

এতক্ষণ যে পাখিটির কথা বললাম, সেটি হচ্ছে নাড়া-আইল-মাঠ-ঘাসবনের একরত্তি পাখি ভরত। তবে মাঠের সবচেয়ে ছোট্ট পাখি নয় এটি। ভরত অ্যালাউডিডি পরিবারভুক্ত। ইংরেজি নাম Rufous-winged বা Bengal Bush Lark; বৈজ্ঞানিক নাম Mirafra assamica. এ দেশের সব জায়গায় আছে। আমাদের সাত প্রজাতির ভরতের পাঁচটি স্থায়ী ও দুটি পরিযায়ী। দেখতে চড়ুই-বাবুইদের মতো; কিছুটা মোটা। লম্বা ১৫ সেন্টিমিটার। মাথার ওপর থেকে পিঠ হয়ে লেজের ওপরটা ধূসর ও তাতে কালচে ডোরা। বুক, পেট ও লেজের গোড়া ধূসর-হলুদ; তাতে লালচে আভা। বুকে বেশ কিছু কালচে দাগ। ডানার দুই পাশ লালচে; লেজের দুই পাশ ও মুখমণ্ডলেও লালচে আভা। মাথায় হালকা ঝুঁটি, ভয় পেলে যা জেগে ওঠে। হালকা হলুদ ঠোঁটের ওপর পোড়ামাটির আভা। পা, আঙুল ও নখও একই রঙের। পুরুষ পাখি ও মহিলা পাখি দেখতে একই রকম। তবে মহিলা পাখিটি পুরুষটির থেকে খানিকটা মোটা ও হালকা রঙের।
ভরত ঘাস ও ঝোপঝাড়পূর্ণ খড়খড়ে মাঠ, ধানের গোড়া আছে এমন কৃষিজমি, খেতের আইল, ছোট ছোট ঝোপ ধরে হাঁটে ও খাবার সংগ্রহ করে। বশেমুরকৃবিতে আমি ও আমার পাখি পর্যবেক্ষণের সঙ্গী কামাল প্রায় এক বছর শ খানেক ভরতের ওপর নজর রাখছি। এরা একাকি, জোড়ায় বা চার-পাঁচটির দলে থাকে। এখানকার একেকটি মাঠে ৪-১৬টি পাখি বাস করছে। এরা পোকামাকড়, ঝরা ধান, ঘাসের বীজ, কচি ঘাসের ডগা খেতে পছন্দ করে। পানি পান করে কম। ঝড় এলে মাটিতে ঘাপটি মেরে পড়ে থাকে।
ভরতের ওড়ার ভঙ্গিমা বৈচিত্র্যপূর্ণ। মাটি থেকে সোজা ওপর দিকে উঠে যায়। তারপর আকাশে অনেকটা সাঁতার কাটার মতো ওড়ে। নামেও সোজাভাবে, তবে শেষদিকে খানিকটা ঘুরে নামে। পুরুষ ভরত সুন্দর ঢঙে গান গায়। এমন সুন্দর গান মাঠের আর কোনো পাখি গায় কি না, সন্দেহ আছে। বাসা তৈরি, ডিম পাড়া ও বাচ্চা হলে পুরুষগুলো আনন্দে আটখানা হয়ে নাচে ও গান গায়। আকাশের ওপরে উঠে ‘চিররা, চিরোরা, চিরোরা’, স্বরে ডাকতে থাকে।
ভরত নিরীহ পাখি; বেশ সাবধানি ও চতুর। এরা বর্ষার আগে, বসন্ত থেকে গরমকালের মধ্যে বাসা বানায়। উলুঘাসের তলা, চওড়া-ঘন আইল বা ঘাসবনের ভেতরটাই বেশি পছন্দ। সরু শুকনো ঘাস, ধানপাতা বা খড় দিয়ে ছোট বাটির মতো বাসা বানায়; মুখটি গোলাকার। সময় লাগে পাঁচ দিন। সাধারণত ডিম পাড়ে তিনটি। ডিমের রং সাদা, ওপরে কালো বা খয়েরি ছোট ছোট ছিট। ডিম ফোটে ১০-১৩ দিনে। আমরা এখন পর্যন্ত আটটি বাসা পর্যবেক্ষণ করেছি। প্রতিটিতে তিনটি করে ডিম ছিল। মাঠের সাপ, গুইসাপ, বেজি ও শিয়াল ঘোরাঘুরি করলেও সহজে ডিম-বাচ্চার খোঁজ পায় না। কিন্তু রাখাল, ঘুঁটে কুড়ানি ও দুষ্টু ছেলের দল ঠিকই খুঁজে পায় ও ডিম-বাচ্চা নষ্ট করে। সম্ভবত একটি বাসার ডিম দুষ্টু ছেলেরা নিয়ে গিয়েছিল। বাকিগুলোতে তিনটি করে বাচ্চা হয়েছিল। বাচ্চারা বাসা ছাড়ে ১০-১২ দিনে। এ সময় এরা উড়তে পারে না; মা-বাবার পেছন পেছন হেঁটে বেড়ায় ও মুখ হাঁ করে পাখা নাচিয়ে কাঁদতে থাকে। ছানারা ওড়ে ২৪-২৫ দিনে। বিপদের গন্ধ পেলে বাচ্চারা মুহূর্তের মধ্যে মাটির সঙ্গে বা ঘাসের মধ্যে বুক মিশিয়ে পরিবেশের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। ভরত মৌসুমে সাধারণত দুবার বাচ্চা তোলে। বাঁচে ১২-১৫ বছর ।প্রথম আলো
Reade more >>

Saturday, July 16, 2011

অতিথিরা স্থায়ী, কালুহাটি এখন পাখির গ্রাম

রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার কালুহাটি গ্রামের একটি আম গাছে বাসা বেঁধেছে অতিথি পাখিরা রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার কালুহাটি গ্রামের একটি আম গাছে বাসা বেঁধেছে অতিথি পাখিরা
ছবি: শহীদুল ইসলাম
এক গাছে এত পাখি! থমকে দাঁড়াচ্ছে পথচারী। এ কারণে প্রায় সারা দিনই আমজাদ মাস্টারের বাড়ির সামনে মানুষের ভিড় লেগেই আছে।
এগুলো আসলে অতিথি পাখি। প্রতিবছর শীতে আসে আবার শীতের শেষে চলে যায়। কিন্তু বছর তিনেক ধরে পাখিগুলো রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার কালুহাটি গ্রামেই স্থায়ীভাবে বসবাস করছে। বাসা বাঁধে, ডিম দেয় ও বাচ্চা ফোটায়। এরা সবাই শামুকখোল। গ্রামবাসীও এদের প্রশ্রয় দিয়েছে। পাখি মারা তো দূরের কথা, রীতিমতো ওদের পাহারা দিয়ে রাখে তারা।
চারঘাট উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে নিভৃত গ্রাম কালুহাটি। ঘটনা তিন বছর আগের। গ্রামের একটি শিমুলগাছের মগডালে কয়েকটি অতিথি পাখি এসে বসে। কেউ উৎপাত করছে না দেখে পাখিগুলো কিছুদিন পর নিচের ডালগুলোতে নেমে আসে। গ্রামের লোকেরা অবাক হয়ে দেখল, এসব পাখির শীত শেষে চলে যাওয়ার কথা, অথচ ওরা বাসা বাঁধছে। নিরাপদ আশ্রয় পাওয়ায় প্রতিবছরই বাড়ছে পাখির সংখ্যা।
গ্রামের বাড়ি-ডাকরা ডিগ্রি কলেজের ছাত্র লিটন মাহমুদ জানান, প্রথমবার শিমুলগাছের নিচের হালকা একটা ডালে এত বেশি পাখি বাসা বেঁধেছিল যে, ভার সইতে না পেরে ডাল ভেঙে অনেক পাখির বাসা নিচে পড়ে ডিম ভাঙে ও বাচ্চা মরে যায়। এ ঘটনায় গ্রামের লোকেরা বেশ মর্মাহত হয়। এর পর থেকেই পাখিদের জন্য গ্রামবাসীর মনে অন্যরকম একটা মায়া জন্মায়। সবাই পাখিদের প্রতি খেয়াল রাখে।
এখন পাখিগুলো পুরো গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে তারা বাসা বাঁধার সময় কয়েকটি নির্দিষ্ট গাছ বেছে নিচ্ছে। এবার পাখিগুলো বাসা বাঁধছে গ্রামের স্কুলশিক্ষক আমজাদ হোসেনের দুটি আমগাছে ও রূপচান আলীর কড়ইগাছে।
কালুহাটি গ্রামে একবেলা: গত বৃহস্পতিবার সকালে কালুহাট গ্রামে ঢুকে কাউকে জিজ্ঞেস করতে হয়নি, অতিথি পাখিরা কোথায় থাকে? দূর থেকেই চোখে পড়ে স্কুলশিক্ষক আমজাদ হোসেনের আমগাছাটি পাখিতে পাখিতে সাদা হয়ে আছে। গাছের গা ঘেঁষে রাস্তা। সেই রাস্তা দিয়ে বিকট শব্দে ভটভটিসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচল করছে। মোটরসাইকেল ও সাইকেল আরোহীরা কৌতূহলী হয়ে গাছটার কাছে এসে একটু থেমে পাখিদের কাজকর্ম দেখছে। এতে করে গাছটির পাশে সারাক্ষণ মানুষের জটলা লেগেই আছে। কিন্তু পাখিগুলো মানুষকে ভয় পাচ্ছে না মোটেই। ভীষণ ব্যস্ত ওরা নিজের কাজে।
গাছের মালিক আমজাদ হোসেন জানান, আম পেড়ে নেওয়ার পরপরই পাখিরা এসে গাছটিতে বাসা করেছে। তিনি খুবই অবাক হয়েছেন, পাখিরা পাশের অন্য একটি গাছে ছিল। আম পাড়ার আগে তারা আসেনি। এখন পুরো গাছ তাদের দখলে। ডালপালা ভেঙে বাসা করেছে। পরের মৌসুমে গাছে আর আম ধরবে না বলে তাঁর এক আত্মীয় পাখিগুলোকে তাড়িয়ে দিতে বলেছেন। কিন্তু তিনি তাঁর আত্মীয়র কথা শোনেননি। তিনি বলেন, এই পাখি ডাকলেও আসবে না। এত সুন্দর পাখি স্বেচ্ছায় তাঁর গাছে আশ্রয় নিয়েছে। টাকা খরচ করেও এমন সুন্দর একটা পরিবেশ তৈরি করা যাবে না। তা ছাড়া অতিথি পাখি মারা সরকার থেকেই নিষেধ আছে। তাই তিনি সাধ্যমতো পাখিদের দেখাশোনা করছেন, কেউ যেন তাদের বিরক্ত না করে।
গাছটির এমন কোনো ডাল নেই, যেখানে পাখির বাসা নেই। ছোট ডালপালা ভেঙে বাসায় জড়ো করে বাসা তৈরি করেছে। ওদের কাজ দেখে চোখ ফেরানো যায় না। কোনোটা বাচ্চার মুখে খাবার দিচ্ছে। কোনোটা বাসা তৈরির জন্য গাছের ডাল ভাঙছে। ঠোকাঠুকি করছে বা দু-তিনটা মিলে গায়ে গা লাগিয়ে বসে রয়েছে। আবার কোনোটা অন্য গাছের ডাল ভেঙে নিয়ে আসছে ঠোঁটে করে। বাসায় ধূসর রঙের বাচ্চারা হাঁ করে বসে আছে। ভয়ডর তো নেই, চলাফেরায়ও অবাধ স্বচ্ছন্দ। গ্রামটা যেন তাদেরই।
পাখিদের পাহারায় গ্রামবাসী: গ্রামের মুদি দোকানি তোতা বলেন, ‘প্রথম দিকে অন্য গ্রাম থেকে বন্দুক নিয়ে কয়েকবার পাখি মারতে এসেছে কিছু লোক। আমরা তাদের বের করে দিয়েছি। সবাই জেনে গেছে কালুহাটি গ্রামে বন্দুক নিয়ে কেউ পাখি মারতে গেলে তার বিপদ আছে।’ গ্রামবাসী জানাল, এই পাখি দিনের বেলায় মাঠে চরে বেড়ায়। সেখানেও সবাইকে বলে দেওয়া আছে, কেউ যেন পাখি না মারে। মাঠে যে শ্রমিকেরা কাজ করেন, তাঁরাও এ ব্যাপারে সতর্ক থাকেন।
তবে গ্রামবাসী পেরে উঠছে না কাকের সঙ্গে। সুযোগ পেলেই কাক এসে শামুকখোলের বাসা থেকে ডিম নিয়ে যাচ্ছে। কাক তাড়াতে গেলে যদি পাখিগুলো ভয় পেয়ে চলে যায়, সে কারণে তারা কাকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না।
কলকাকলিমুখর পাখির গ্রাম: কালুহাটি গ্রামটি এখন পাখির গ্রাম বলেই পরিচিতি পেয়েছে আশপাশে। সারা রাত এসব পাখির কলকাকলিতে গ্রাম মুখরিত হয়ে থাকে। গ্রামের সুখদা বেগম বলেন, ‘রাতে এই গ্রামে কোনো নতুন মানুষ এলে ভয়ই পাবে। আমাদের দেশি পাখিরা প্রহরে প্রহরে কিচিরমিচির করে, কিন্তু এই পাখির ডাক বেশ অন্য রকম। অনেক দূর থেকেও শোনা যায় সেই ডাক।’
প্রথম আলো
Reade more >>

Tuesday, July 12, 2011

আমাদের বাঁশঘুঘু

বাঁশঝাড়ে বাঁশঘুঘু ডিমে তা দিচ্ছেবাঁশঝাড়ে বাঁশঘুঘু ডিমে তা দিচ্ছে
গোলাপিকণ্ঠী ও লালবুক টিয়া সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা চিড়িয়াখানায় গিয়েছিলাম। ফেরার পথে পাখির খাঁচার দিকে একটু ঢুঁ দিতে গেলাম। ঘুঘুর খাঁচার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ চোখে পড়ল বাঁশঘুঘু খাঁচার ভেতরের ছোট বাঁশঝাড়টাতে বাসা তৈরি করে বসে আছে। 
চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ যদিও এদের জন্য কবুতরের খোঁপের মতো বাসা তৈরি করে দিয়েছে, কিন্তু এরা বাঁশঝাড়েই নিজেদের বাসা বানাতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। পাখির তত্ত্বাবধায়ককে খাঁচার সামনেই পেলাম। তাঁর কাছে জানলাম, প্রায় দুই বছর পর বাঁশঘুঘু বাসা বেঁধেছে। খাঁচায় বাঁশঘুঘু আছে পাঁচটি।
কী হলো, খোঁজ নিতে আবার চিড়িয়াখানা গেলাম এপ্রিলের শুরুতে। ভেবেছিলাম, খাঁচায় নিশ্চয় বাঁশঘুঘুর সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু গুণে দেখলাম পাঁচটিই রয়েছে। ব্যাপারটা কী? তত্ত্বাবধায়ক বললেন, দর্শনার্থীরা বিরক্ত করায় বাসা তৈরি করলেও শেষ পর্যন্ত ডিম পাড়েনি। মন খারাপ করে চলে এলাম। 
তবে খোঁজ রাখলাম নিয়মিতই এবং খবর পেলাম আবার বাসা বেঁধেছে বাঁশঘুঘু। পাখিবিশারদ শরীফ খান খবর দিলেন, চিড়িয়াখানায় এবার বাঁশঘুঘুর ডিম ফুটেছে। ছানা হয়েছে একটি। 
এপ্রিলের শেষ নাগাদ গিয়ে দেখতে পেলাম এবার বাঁশঘুুঘুর সংখ্যা ছয়টি। বাবা-মায়ের সঙ্গে বেশ আমোদ-আহ্লাদ করছে ছোট্ট ছানাটি। বেশ ভালো লাগল।
বাঁশঘুঘু এ দেশে ‘সবুজ ঘুঘু’ নামে বেশি পরিচিত। এদের কোথাও কোথাও ‘পাতি শ্যামাঘুঘু’ও বলে। বাঁশবন বা বাঁশঝাড়ে বেশি দেখা যায় বলে এরা বাঁশঘুঘু নামে পরিচিত। ১৯৯৬ সালে বাগেরহাটে এই নামটি শুনেছি। তখন থেকেই নামটি আমার মনে ধরেছে। বাঁশঘুঘুকে ইংরেজিতে Common বা Green emerald dove, Bronze-winged dove বা Green-winged pigeon বলা হয়। বৈজ্ঞানিক নাম Chalcophas indica বা Columba indica. অনেকের মতে, এ দেশের বিভিন্ন প্রজাতির ঘুঘুর মধ্যে বাঁশঘুুঘুই সবচেয়ে সুন্দর। 
বাঁশঘুঘু লম্বায় ২৭ সেন্টিমিটার ও ওজন ১৩০ থেকে ১৩৫ গ্রাম। এদের ডানা ও পিঠ সবুজ। পিঠের নিচে দুটো সাদা দাগ; তার মাঝখানে একটি কালো দাগ। পুরুষ পাখি বা পায়রার দেহের ওপরের অংশ চকচকে পান্না সবুজ। মাথা ধূসর, কপাল, থুঁতনি ও ভুরু সাদা। কাঁধের ওপরে ছোট সাদা দাগ। লেজ ও ডানার ওড়ার পালক কালচে। মাথার দুই পাশ ও দেহের নিচের অংশ সুন্দর লালচে বাদামি (বা গোলাপি)। পায়রি দেখতে পায়রার মতো হলেও মাথা, থুঁতনি ও কাঁধের ওপরের অংশ বাদামি। কপাল ও ভুরু ধূসর। পায়রির দেহের নিচের অংশ গাঢ় বাদামি। পায়রা-পায়রি উভয়ের ঠোঁট উজ্জ্বল লাল বা গোলাপি লাল। পা ও নখ গোলাপি। বাচ্চা দেখতে অনেকটা মায়ের মতো হলেও এদের ঠোঁট বাদামি-ধূসর, কপালে দুটো ধূসর দাগ, লেজের দিকটা লালচে-বাদামি, গলা ও দেহের নিচের অংশের পালকের প্রান্ত হলদে।
বাঁশঘুঘু মূলত পাতাঝরা, চিরসবুজ, শাল ও বাঁশবনের বাসিন্দা। সুন্দরবনে প্রচুর আছে। সিলেটের বিভিন্ন বনেও আছে বেশ। একসময় প্রায় সারা দেশেই গ্রামাঞ্চলে দেখা যেত। কিন্তু শিকারিদের কবলে পড়ে এবং বাঁশঝাড় ও ঝোপজঙ্গল কমে যাওয়ায় বর্তমানে তেমন একটা দেখা যায় না। বলা যায় বিপন্ন। তবে বাগেরহাটের গ্রামীণ বনগুলোতে এরা এখনো মোটামুটি আছে। বাঁশঘুঘু একাকী, জোড়ায় বা ছোট দলে থাকে। এরা গাছ বা বাঁশঝাড়ের তলায় হেঁটে হেঁটে শস্যদানা, ফল, বিচি ও উইপোকা খায়। বনের ধারে নির্জন খোলা জায়গায় কিংবা রাস্তার ধারে খুব ভোরে, ভরদুপুরে বা সন্ধ্যার আগে আগে খাবার খেতে নামে। সাধারণত খেতখামারে এদের দেখা যায় না। এরা মানুষকে বেশ ভয় পায় ও এড়িয়ে চলে। বনের ভেতরে খুব কম উচ্চতায়ও বেশ দ্রুতগতিতে উড়তে পারে। এদের গলার স্বর বেশ নরম, ‘হু-হু-হুন’ স্বরে ডাকে। সারা বছর প্রজনন করতে পারলেও সাধারণত বর্ষার আগে ডিম দেয় বেশি। ছোট গাছ, বাঁশঝাড় বা ঝোপঝাড়ে কয়েকটি কাঠিকুটি জড়ো করে ছোট্ট ও অগোছালো বাসা বানায়। পায়রি দুটো হালকা ঘিয়ে বা হলদে রঙের ডিম পাড়ে। ডিম ফোটে ১২ দিনে।


Reade more >>