Pages

Ads 468x60px

Sunday, October 23, 2011

 সাদা-কালোয় পাকড়া মাছরাঙা

পঞ্চগড়ের আটোয়ারীর সীমান্তবর্তী নাগরা-নাগরি নদীতে একজোড়া পাকড়া মাছরাঙা পঞ্চগড়ের আটোয়ারীর সীমান্তবর্তী নাগরা-নাগরি নদীতে একজোড়া পাকড়া মাছরাঙা
ছবি: লেখক
এরা ‘পাকড়া মাছরাঙা’ (Pied Kingfisher)। কড়িকাটা, ফটকা, চিতে বা ডোরাকাটা মাছরাঙা নামেও পরিচিত। সাদা-কালো হলেও খুব সুন্দর পাখি। এমনকি অনেকের মতে, এরাই এ দেশের মাছরাঙাদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর। বৈজ্ঞানিক নাম Ceryle rudis, অর্থাৎ তলোয়ারঠুঁটো পাখি।
এরা লম্বায় ৩১ সেন্টিমিটার। দেহের সাদা জমিনের ওপর কালো দাগ ও ফোঁটা। উড়ন্ত অবস্থায় দেহের রং আরও খুলে যায়। ডানায় সাদা-কালোর চমৎকার কারুকাজ। মাথার খোঁপা কালো। ঘাড় থেকে একটি চওড়া কালো টান চোখের নিচ হয়ে ঠোঁটের আগা পর্যন্ত চলে গেছে। গলার নিচে সাদা, তাতে দু-চারটি কালো ছোট ছোপ। লেজের আগা সাদা, নিচের কিছুটা অংশ কালচে। পুরুষ ও স্ত্রী দেখতে একরকম হলেও পুরুষের বুকে দুটো কালো রেখা রয়েছে; স্ত্রীর ক্ষেত্রে এই রেখা অসম্পূর্ণ। ঠোঁট মোটা ও শক্ত। ঠোঁট, পা ও নখ মেটে-কালো।
মূলত মাছখেকো হলেও ব্যাঙাচি ও জলজ পোকামাকড়ও খায়। দেশের সবখানেই কমবেশি দেখা যায়। সচরাচর জোড়ায় থাকে। নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর, এমনকি ছোটখাটো পানির উৎস প্রভৃতি স্থানে যেখানে খাবার আছে, সেখানেই ঘোরাফেরা করে। এরা চিররিক-চিররিক-চিররিক শব্দে ডাকে। উড়ন্ত অবস্থায় বেশি ডাকে।
ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল প্রধান প্রজননকাল হলেও সারা বছরই বাচ্চা তোলে। বাসা বানায় ডোবা-নালা-খাল-নদীর খাড়া পাড়ের দেয়ালে। পা ও ঠোঁট দিয়ে গর্ত খুঁড়ে। বাসার গভীরতা ৯০ থেকে ১০০ সেন্টিমিটার ও চওড়া সাত থেকে আট সেন্টিমিটার হতে পারে। বাসার স্থান নির্বাচনে বেশ বুদ্ধির পরিচয় দেয়। খাড়া দেয়ালের এমন স্থানে গর্ত করে, যেখানে সাপ-গুঁইসাপ বেয়ে উঠতে পারে না। গর্তের মুখ ছোট ও গভীরতা বেশি থাকায় মাংসাশী প্রাণী ও শিকারি পাখিরা ডিম-বাচ্চার ক্ষতি করতে পারে না। স্ত্রী গর্তের শেষ মাথায় পাঁচ থেকে সাতটি সাদা ডিম পাড়ে। ডিম ফোটে ১৯ থেকে ২২ দিনে। বাচ্চারা উড়তে শেখে ১৩ থেকে ১৬ দিনে।
এরা অত্যন্ত নিরীহ। শক্তিশালী ঠোঁট থাকতেও কারও সঙ্গে মারামারি করে না। আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে সুন্দর এই পাখিগুলো রক্ষা করা প্রয়োজন।
Reade more >>

Wednesday, October 19, 2011

 খুদে পাখি ভোমরা ছোটন

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে গুল্ম শাখায় বসে আছে ভোমরা ছোটন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে গুল্ম শাখায় বসে আছে ভোমরা ছোটন
ছবি: লেখক
ভোমরা ছোটন খাটো লেজের অতি খুদে তৃণচারী পাখি। দেহের দৈর্ঘ্য ১০ সেমি, ওজন ৭ গ্রাম। প্রধানত একাকী ও জোড়ায় চলে। তবে প্রজননের সময় কয়েক জোড়া পাখি একই সঙ্গে দেখা গেছে। এ বৈশিষ্ট্য মুন্সিগঞ্জের কাছে পদ্মার লৌহজং চরে পাখি দেখতে গিয়ে কয়েকবারই চোখে পড়েছে। খুদে এ পাখিটি খুব সামান্য দূরত্বে উড়ে বেড়ায় ঘাসবন থেকে নলবনে এবং কিছুক্ষণ পরপরই ‘যিট...যিট...যিট’ সুরে ডাকে। এরা বেড়ে ওঠে নদীতীরের নলবন, ঘাসবন ও ধানখেতে। খুব সকালেই এ পাখি তার দৈনন্দিন কাজ শুরু করে। শণ ও ঘাসের ডগায় ডগায় উড়ে বেড়ায় এবং শুকনো ধানখেতে নামে খাবারের সন্ধানে।
দেশের সব বিভাগের আর্দ্র আবাদি জমিতে পাখিটি দেখা যায়। ইউরোপের দক্ষিণাঞ্চল, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়ার উত্তরাঞ্চল, মালদ্বীপ ছাড়া উপগ্রীষ্মমণ্ডলীয় এশিয়াতে পাখিটির বিস্তৃতি রয়েছে। এর ইংরেজি নাম Zitting Cisticola। বৈজ্ঞানিক নাম Cisticola juncidis।
প্রাপ্তবয়স্ক ছোটন পাখির পিঠের পালক কালচে বাদামি দাগসমেত হালকা পীত বর্ণের। মাথার চাঁদি ধূসর-বাদামি। লেজ ফিকে। ছেলে ও মেয়ে উভয় পাখির চোখ পিঙ্গল বাদামি, জলপাই বাদামি বা খড় বর্ণের। পা ও পায়ের পাতা মেটে। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথায় মোটা লম্বা দাগ থাকে এবং দেহতল হলদে।
ফড়িং, পিঁপড়া, মাকড়সা, শুঁয়োপোকা, গুবরেপোকা ও ফলের বীজ আছে এদের প্রধান খাবার তালিকায়। শুকনো ঘাস ও পাতা-নল দিয়ে মার্চ-জুলাই মাসে নল বা শণের ডগায় ডিম্বাকৃতির বা মোচাকার বাসা বানায়। চার-পাঁচটি ডিম দেয়। ডিম ফিকে নীল। ডিম থেকে ১০ দিনেই ছানা ফোটে। মা-বাবা উভয়ে মিলেই সংসারের বাকি কাজ চালিয়ে যায়। দেশে পাখিটির সংখ্যা ভালোই আছে।

 প্রথম আলো
Reade more >>

Friday, October 14, 2011

লেজ যেন তার পাখা

ছানা বুকে নিয়ে বাসায় বসে আছে লেজ নাচুনে পাখি ছানা বুকে নিয়ে বাসায় বসে আছে লেজ নাচুনে পাখি
ছবি: মো. হানিফ
এমন আমুদে খেলুড়ে তথা ফুর্তিবাজ ও নাচুনে সুন্দরী পাখিটি যে প্রয়োজনে ধারণ করতে পারে রুদ্রমূর্তি, দুর্দান্ত সাহসে তেড়ে যেতে পারে শত্রুর দিকে, করতে পারে কুশলী আক্রমণ, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস হতে চায় না। এই বৈশিষ্ট্য যেন সম্পূর্ণ তার চরিত্রের বিপরীত। এই পাখিরা প্রজনন মৌসুমে নান্দনিক সৌন্দর্যমণ্ডিত নৃত্যগীতে মাতোয়ারা হয় গাছের মোটা ডালের মঞ্চে, মানকচুর পাতার মঞ্চে, ঘরের চালার মঞ্চে প্রেমিক-প্রেমিকা মুখোমুখি হয়ে পাখার পালক ফুলিয়ে লেজের সুবিন্যস্ত ১২ খানা পালককে জাপানি পাখা বানিয়ে ওপরে তুলে এনে ধ্রুপদি নৃত্যে মেতে ওঠে—ঘুরে ঘুরে নাচে ও গান গায়। তাদের মনোমুগ্ধকর সেই নৃত্যগীত দেখার পর যদি দেখা যায় যে ওই দুটি পাখিই চেঁচিয়ে বাগান মাত করছে, দুটিতে পরিকল্পিতভাবে দুই পাশ থেকে তীরের ফলার মতো নেমে এসে একটি গুইসাপের পিঠে বা বনবিড়ালের পিঠে ঠোকর দিচ্ছে, তাহলে বিস্মিত হতে হয় বৈকি।
হ্যাঁ, জাপানি পাখার মতো লেজের পালক মেলতে পারা, গাছের ডালে ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্রেমিক-প্রেমিকা মিলে নেচে-গেয়ে মেতে থাকা এমন পাখি বাংলাদেশে আর আছে কি! প্রজনন মৌসুমে এই পাখিরা ঠিক যেন লাইলী-মজনু হয়ে যায়।
পাখিটির নাম নাচুনে, প্রয়োজনে লেজের পালকগুলোকে এরা জাপানি পাখা বানিয়ে ফেলতে পারে। নাম তাই লেজনাচুনে। বৈজ্ঞানিক নাম Rhipidura albicollis. মাপ ১৯ সেন্টিমিটার। এই পাখিটি আমাদের গ্রামের বাড়ির বাগানে প্রতি মৌসুমে ২-১০টি বাসা করে। বাসা করত ছোট লেজনাচুনে বা নীলরাজা (Black-naped monarch) পাখিরা। স্বভাবে বাসা বাঁধার কৌশলে এই দুই জাতের পাখির মধ্যে খুবই মিল—মিল আছে খাদ্য তালিকায়ও। এ বছর (২০১১ সালের এপ্রিলে) আমাদের গ্রাম বাগেরহাটের সাতশৈয়ায় এই দুই জাতের বাসা দেখলাম ১৯টি।
লেজনাচুনেদের পছন্দ ছায়া ছায়া মায়া মায়া বনবাগান। এরা সারা দেশেই আছে। খাদ্য মূলত পোকা-মাকড়। বাসা করে খুব সুন্দর। গাছের সরু ডালে বা বাঁশের নুয়ে পড়া কঞ্চিতে। বাসার নিচে লেজের মতো ঝুলে থাকে বাসার উপকরণ। ঝড়ে কঞ্চি-বাসা যতই দোল খাক, বাসার ডিম-ছানা ছিটকে পড়ে না। কেন পড়ে না? কুশলী ও বুদ্ধিমান পাখি এরা। পুরো শরীর কালচে, তাতে হালকা ধূসরের আভা। গলা ও চোখের ভ্রূ সাদা। চোখের পাশটা কালো, লেজের ডগা সাদা। চোখ-ঠোঁট কালো। ডিম পাড়ে তিনটি। ডিম যেন সিমেন্টের প্রলেপ দেওয়া। বাসার চারপাশেও এমন প্রলেপ দেখা যায় কখনো কখনো। আশপাশের কোনো পাখি বিপদে পড়লে এরা সাহায্যে এগিয়ে আসে।
Reade more >>